বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮

অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্য


অক্ষয় তৃতীয়ার তিথিতে গঙ্গা দেবী
মর্তে এসেছিলেন। সগর রাজার বংশ
কপিল শাপে ভস্ম হলে- তাঁদের
প্রেতাত্মার মুক্তির জন্য রাজা সগর
এর বংশ পরম্পরায় তপস্যা চলে।
ভগীরথের তপস্যায় প্রজাপতি ব্রহ্মা ,
গঙ্গা কে মর্তে আসবার অনুমতি দিলে
একজন ধারকের প্রয়োজন হয়- কারন
সরাসরি গঙ্গা দেবী বসুমতীতে অবতরণ
করলে বসুমতী সেই বেগ সহ্য করতে
অসমর্থা ছিলেন । ভগবান শিব সেই
ধারক হন। পতিতপাবনী জাহ্নবী গঙ্গার
স্পর্শে সেই প্রেতাত্মাগণের মুক্তি
ঘটে । সেই পুন্যসলিলা মা গঙ্গার
একবিন্দু পবিত্রজলেতে মহাপাপ নাশ
হয় ।
গঙ্গার ধ্যান
= = = = =
ওঁ সুরূপাং চারুনেত্রাঞ্চ চন্দ্রামৃতসমপ্র
ভাম্ ।
চামরৈর্বীজ্যমানান্তু
শ্বেতচ্ছত্রোপশোভিতাম্।।
সুপ্রসন্নাং সুবদনাং করুণার্দ্র-
নিজান্তরাম্ ।
সুধাপ্লাবিত- ভূপৃষ্ঠাম্রার্দ
গন্ধানুলেপনাম্ ।।
ধ্যায়েন্মকরপৃষ্ঠস্তাং
শ্বেতলঙ্কারভূষিতাম্ ।
ত্রৈলোক্যনমিতাং গঙ্গাং
দেবাদিভিরভিষ্টুতাম্ ।।
গঙ্গার প্রণাম
= = = = =
ওঁ সদ্য পাতকসংহরী
সদ্যোদুঃখবিনাশিনী ।
সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমা
গতিঃ ।।

শ্রী শ্রী তুলসী আরতি


নমো নমঃ তুলসী ! কৃষ্ণপ্রেয়সী ৷
রাধাকৃষ্ণ-সেবা পাব এই অভিলাসী ৷৷
যে তোমার শরণ লয়, তার বাঞ্ছা পূর্ণ হয়,
কৃপা করি কর তারে বৃন্দাবন বাসী ৷
মোর এই অবিলাস, বিলাস-কুঞ্জে দিও বাস,
নয়নে হেরিব সদা যুগলরূপরাশি ৷৷
এই নিবেদন ধর, সখীর অনুগত কর,
সেবা-অধিকার দিয়ে কর নিজ দাসী ৷
দীন কৃষ্ণদাসে কয়, এই যেন মোর হয়,
শ্রীরাধাগোবিন্দ-প্রে­মে সদা যেন ভাসী ৷৷
তুলসী-প্রদক্ষিণ মন্ত্র
যানি কানি চ পাপানি ব্রহ্মহত্যাদিকানি চ।
তানি তানি প্রনশ্যন্তি প্রদক্ষিণ পদে পদে ॥
অনুবাদ :—-
অর্থঃ– যখন মানুষ শ্রীমতী তুলসীদেবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে ,তখন প্রতি পদক্ষেপে তার কৃত সকল পাপকর্ম ,এমন কি ব্র্হ্মহত্যার পাপও বিনষ্ট হয়ে যায় । তারপরে বাঁ হাতে পষ্ণপাত্র ধারণ করে তা থেকে ডান হাত দিয়ে শ্রীমতি তুলসীদেবীকে জল সিষ্ণন করতে হয় ।।
তুলসী প্রাণম মন্ত্র
(ॐ) বৃন্দায়ৈ তুলসী দৈব্যৈ প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ ।
বিষ্ণুভক্তি প্রদে দেবী সত্যবত্যৈ নমো নমঃ ॥
তুলসী জলদান মন্ত্র
(ॐ) গোবিন্দবল্লভাং দেবীং ভক্তচৈতন্যকারিণীম্ ।
স্নাপয়ামি জগদ্ধাত্রীং কৃষ্ণভক্তি প্রদায়িনীম্ ॥
তুলসী চয়ন মন্ত্র
(ॐ) তুলস্যমৃতজন্মাসি সদা ত্বং কেশবপ্রিয়া ।
কেশবার্থে চিনোমি ত্বাং বরদা ভব শোভনে ॥
{জয় মা তুলসী মহা রানী}

কর্মভেদেই জন্ম


মৃত্যু কালে মানুষ যাকে স্বরন করিতে
করিতে মৃত্যু বরণ করেন ,, তিনি তাই
প্রাপ্ত করেন !! এখন প্রশ্ন ,, তাহলে
আমরা নিয়ম - নিষ্ঠা পালন করে
ইন্দ্রিয় সংযম করে ,, সর্বদা ভগবানের
নাম করব কেন ?? মৃত্যুকালে শুধু একবার
শ্রীকৃষ্ণের নাম নেব এবং তাকে
পেয়ে যাব !!তাহলে কি দরকার
ইন্দ্রিয় সংযম ,, নিয়ম ,, নিষ্ঠা ,, ভক্তি ,,
ধ্যান ,, নিষ্কাম কর্ম করা ??
কথাটা শোনতে খুব সহজ লাগে আসলে
এটা কিন্তু অত সহজ নয় !! অভ্যাস হইতে
ধ্যান বড় ,, ধ্যান হইতে জ্ঞান বড় ,,
জ্ঞান হইতে ফলত্যাগ বড়।ইহাদের
মধ্যে ইন্দ্রীয় হচ্ছে সবথেকে
শক্তিশালী।
আমরা অভ্যাসের মাধ্যমে যে যে কর্ম
করি ,,তা ইন্দ্রিয় দ্বারা পরিচালিত
হয়।
ইন্দ্রিয় এমন একটি জিনিস যা মানুষকে
সর্বদা কাম ,, ক্রোধ ,, লোভের দিকে
অগ্রসর করে।
ইন্দ্রীয়কে সংযম না করিতে
পারিলে মনকে নিয়ন্ত্রন করা অসম্ভব
হয়ে পড়ে।
আর মনকে নিয়ন্ত্রন না করিতে
পারলে ,, ইন্দ্রীয়গুলি মনের উপর প্রভাব
বিস্তার করে ,, এবং তামসিক গুনগুলো
সর্বদা মনে আনাগুনা হইতে থাকে।
এবং ভগবানের প্রতি ধ্যান অসম্ভব হয়ে
ওঠে।
মৃত্যুকালে মানুষের মস্তিষ্ক স্বভাবতই
কমজোর হইয়া যায় এবং ইন্দ্রিয় দ্বারা
যে যে কর্ম করা হইয়াছে শুধু তাহাই
মনে আসিতে থাকে।
ধনের প্রতি মোহ থাকিলে ধনের
চিন্তা আসে ,,মানুষের প্রতি মোহ
থাকিলে শুধু তাহারই নাম মনে আসে
,, কাহারো প্রতি প্রতিশোধের স্পৃহা
থাকিলে তাহা মনে আসে ইত্যাদি
ইত্যাদি।
এজন্য সর্বদা বলা হয়েছে ,,ভালো কর্ম
কর ,,সর্বদা ভগবানের নাম কর ,,তাহলেই
না ভগবানের নাম এবং ভগবানের
প্রতিচ্ছবি তোমার ইন্দ্রিয় এবং মনে
মিশিয়া যাইবে।এবং মন ও ইন্দ্রীয়
ভগবানের দাস হয়ে যাবে ,, তখন উঠতে
বসতে ঘুমোতে বা যেকোন কর্ম কর না
কেন ,,শুধুই তার নাম মনে আসিবে।এবং
মৃত্যুকালে তুমি চাও বা না চাও প্রভুর
নাম তোমার মনে আসবেই এবং তখনই
তুমি তাকে প্রাপ্ত করিবেই।সেজন্য
বলি সর্বদা হরিনাম কর,গীতা পাঠ
কর,মনের সর্বোচ্চস্থানে শ্রীকৃষ্ণের
নাম রাখ ,, তারপর সবার নাম রাখ ,,
এতেই সবার মঙ্গল।
জয় রাধে ,, যেমন হবে যার মতি ,,
তেমনই হবে তার গতি !! এই বিষয়ে
কোনো সন্দেহ নাই।

ভগবানের দিব্যনামই সর্বশ্রেষ্ঠ মূল্যবান বস্তু


একসময়জীবন ঠাকুর নামে এক দরিদ্র
ব্রাহ্মণ সংসার নির্বাহে অসমর্থ হয়ে
কাশীধামে ভগবান মহাদেবের
শরণাগত হন এবং ভগবান শিবের
আরাধনা করতে থাকেন।
বৈষ্ণবরাজ আশুতোষ তাঁর সাধনে
সন্তুষ্ট হয়ে আদেশ দিলেন- “তুমি
বৃন্দাবনে যাও। সেখানে সনাতন
গোস্বামীর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান
বস্তু প্রার্থনা কর। তোমার বাসনা পূর্ণ
হবে''।
জীবন ঠাকুর বৃন্দাবন এসে শ্রীল সনাতন
গোস্বামীকে সেই কথা জানালে
তিনি বললেন- “দেখ গিয়ে
আবর্জনাগুলোর পাশে ছাই আছে
তাতে নাড়াচাড়া করে দেখ কিছু
পেতে পার।”
ঠাকুর আবর্জনার মধ্যে একটি উজ্জ্বল
পরশমণি পেলেন। লোহাতে পরশমণির
ছোঁয়া লাগালে লোহা সোনায়
পরিণত হয়। অত্যন্ত মূল্যবান পরশমণি
পেয়ে তিনি দ্রুত গতিতে মহানন্দে
বাড়ীর দিকে রওনা হলেন।
পরিশ্রান্ত হয়ে এক গাছের নীচে বসে
চিন্তা করলেন- “আচ্ছা! সনাতন
গোস্বামী এটি আবর্জনাতে ফেলে
দিয়েছেন কেন? এবং আমি যে
পরশমণি নিয়ে চলে আসলাম তাঁকে
তো একবারও বললাম না''!
তখন তিনি ফিরে এসে সনাতন
গোস্বামীর চরণে প্রণতি নিবেদন
করে বলতে লাগল- “এর চেয়ে নিশ্চয়ই
আরও মূল্যবান বস্তু আপনার কাছে আছে,
নইলে এটা আবর্জনাতে ফেলে
দিয়েছেন কেন?”
গোস্বামী বললেন- “তুমি সবচেয়ে
মূল্যবান বস্তু চাও?”
জীবন ঠাকুর বললেন-“হ্যাঁ, মহাদেব শিব
তাইতো বলেছেন, যে জন্যে আপনার
পদপ্রান্তে আমি অধম এসেছি। ”
সনাতন গোস্বামী বললেন-“তবে ওই
পরশপাথরটি যমুনার জলে ফেলে দিয়ে
স্নান করে এসো।”
জীবন ঠাকুর তৎক্ষণাৎ গুরুদেবের আদেশ
পালনে রত হলেন। তারপর সনাতন
গোস্বামী তাকে হরিণাম মন্ত্র
প্রদান করলেন।
“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে
হরে”।
এই পবিত্র দিব্য হরিনাম বৈষ্ণবের
সর্বপেক্ষা মূল্যবান বস্তু। তুমি সর্বক্ষণ এই
মহামন্ত্র কীর্তন কর।''
জীবন ঠাকুর হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করে
চিন্ময় আনন্দে আল্পুত হয়ে তার দু-চোখ
বেয়ে আনন্দ অশ্রু ঝরছিল আর শ্যামসুন্দর
দ্বিভুজ মুরলীধর পরমেশ্বর ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের দর্শন লাভ করেছিলেন।
। হিতোপদেশ।
যতই মূল্যবান বস্তু হোক না কেন,
জড়জগতের সমস্ত বস্তুই ক্ষণস্থায়ী। এই
জীবনও কালের প্রভাবে পরিবর্তিত
হয়। কিন্তু ভগবৎ-প্রতিনিধিরদেওয়া
মহামন্ত্র জীবকে মহাকালের উর্ধ্বে
উন্নীত করে ভগবানের নিত্য আনন্দময়
ধামে নিয়ে যায়।
সুতরাং ভগবানে
র দিব্যনামই
সর্বশ্রেষ্ঠ মূল্যবান বস্তু।। হরেকৃষ্ণ।

সোমবার, ২ এপ্রিল, ২০১৮

স্বামী বিবেকানন্দের কিছু বাণী: 'মানবতায় সনাতন™'



স্বামী বিবেকানন্দের কিছু বাণী:
'মানবতায় সনাতন™'

(১) নিজের উপর বিশ্বাস না আসিলে ঈশ্বরে বিশ্বাস আসে না। ভাবিও না তোমরা দরিদ্র, ভাবিও না তোমরা বন্ধুহীন; কে কোথায় দেখিয়াছে টাকায় মানুষ করিয়াছে! মানুষই চিরকাল টাকা করিয়া থাকে। জগতের যা কিছু উন্নতি, সব মানুষের শক্তিতে হয়েছে, উৎসাহের শক্তিতে হইয়াছে। বিশ্বাসের শক্তিতে হইয়াছে। প্রাচীন ধর্ম বলিত, যে ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে সে নাস্তিক। নতুন ধর্ম বলিতেছে, যে আপনাতে বিশ্বাস স্থাপন না করে সে ই নাস্তিক।

(২) নিজের উপর বিশ্বাস-ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস। ইহাই উন্নতি লাভের একমাত্র উপায়। তোমার যদি এ দেশীয় পুরাণের তেত্রিশ কোটি দেবতার উপর এবং বৈদেশিকেরা মধ্যে মধ্যে যে সকল দেবতার আমদানি করিয়াছে, তাহাদের সবগুলির উপরই বিশ্বাস থাকে ,অথচ যদি তোমার আত্মবিশ্বাস না থাকে, তবে তোমার কখনই মুক্তি হইবে না। নিজের উপর বিশ্বাস সম্পন্ন হও - সেই বিশ্বাসসম্পন্ন হও - সেই বিশ্বাসবলে নিজের পায়ে নিজে দাড়াও এবং বীর্যবান হও।

(৩) মানুষকে সর্বদা তাহার দুর্বলতার বিষয় ভাবিতে বলা তাহার দুর্বলতার প্রতীকার নয়- তাহার শক্তির কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়াই প্রতিকারের উপায়। তাহার মধ্যে যে শক্তি পূর্ব হইতে বিরাজিত ,তাহার বিষয় স্মরণ করাইয়া দাও।

(৪) সাফল্য লাভ করিতে হইলে প্রবল অধ্যবসায় ,প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকা চাই। অধ্যবসায়শীল সাধক বলেন,' আমি গণ্ডূষে সমুদ্র পান করিব। আমার ইচ্ছামাত্র পর্বত চূর্ণ হইয়া যাইবে।' এইরূপ তেজ, এইরূপ সংকল্প আশ্রয় করিয়া খুব দৃঢ়ভাবে সাধন কর। নিশ্চয়ই লক্ষে উপনীত হইবে।

(৫) তোমাদের স্নায়ু সতেজ কর। আমাদের আবশ্যক - লৌহের মত পেশী ও বজ্রদৃঢ় স্নায়ু। আমরা অনেক দিন ধরিয়া কাঁদিয়াছি; এখন আর কাদিবার প্রয়োজন নাই, এখন নিজের পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াইয়া মানুষ হও।

(৬) পৃথিবীর ইতিহাস কয়েকজন আত্মবিশ্বাসী মানুষেরই ইতিহাস। সেই বিশ্বাসই ভিতরের দেবত্ব জাগ্রত করে। তুমি সব কিছু করিতে পার।
মনে করিও না, তোমরা দরিদ্র। অর্থই বল নহে ; সাধুতাই-পবিত্রতাই বল। আপনাতে বিশ্বাস রাখো। প্রবল বিশ্বাসই বড় কাজের জনক।

(৭) হে বীরহৃদয় যুবকগণ ,তোমরা বিশ্বাস কর যে ,তোমরা বড় বড় কাজ করবার জন্য জন্মেছ। ওঠ, জাগো, আর ঘুমিও না; সকল অভাব, সকল দুঃখ ঘুচাবার শক্তি তোমাদের ভিতরেই আছে। এ কথা বিশ্বাস করো, তা হলেই ঐ শক্তি জেগে উঠবে।